একটি ব্যর্থতার প্রাপ্তিস্বীকার
আমার হাতটা থেঁতলে গেছে,
শুধু ঐটুকু ঘৃণার কারণে
আমার অকারণ ধুকপুক করা হৃদয়টাও দেখছি আর আগের মত নেই।
ওটাও বুকের পাজরের নিরাপদ আশ্রয় ছেঁড়ে ভিড়েছে থেঁতলানো হাতের দলে।
হাত আর হৃদয়ের পার্থক্যটা আর রইলো কই?
আমার তথাকথিত আবর্জনার স্তূপটা কোথায়?
ইস! একেবারে ছিটকে পড়েছে এদিক-সেদিক
আগের মত আর মাথা বলে চেনাই যাচ্ছে না।
যাক বাবা! এই রদ্দি মালের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেল তবে!
পা’টার অবস্থা দেখেছো?
একমাত্র ওটাই চেনা যাচ্ছে।
নাহ! পা ছিলো দুখানা, কি অত্যাচারটাই না সহ্য করেছে।
মধ্যবিত্তের পা বলে কথা!
না, আমার কোন পিছুটান ছিলো না।
আমি তো আর সংসারের হাল ধরিনি
সেও এক ব্যাপার বই কি!
সিনেমার চেয়ে কোন অংশে কম নয়
যুগ যুগ জিও বাবা!
আমার কোন খেদও নেই, কেন বাবা এই হ্যাপা।
এই বোঝা থেকে তো ছাড়া পাওয়া গেল।
বোঝাটা বড্ড ভারি হয়ে গেছে আজকাল।
সেটাও কি ওই ঘৃণার কারণে?
আমি নাকি আর সবার মত নই।
তাই আমার বোঝাটাও হয়ত বেশি ভারি।
সে যাই হোক, আমি এখন ঝাড়া হাত-পা…।
(৫/৩/২০১৩ সালে লেখা এই ‘কিছুই-না-হওয়া’ আমার কবিতাটা ১৭ বছর বয়েসে আমার লেখা প্রথম সুইসাইড নোট। উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে, তারপর আমার শরীরের টুকরোগুলোকে উতসর্গ করে লিখেছিলাম। প্রচন্ড অস্থির একটা সময়, তারচেয়েও দুঃসহ depression, দীর্ঘ দুই বছর প্রায় প্রতি রাত আমি মৃত্যু কল্পনা করেছি। এই গোটা সময়ে, আমার পরিবার কখনো আমার মানসিক অস্থিরতাটা টের পায়নি, কিংবা খুব typical বাঙালি পরিবারের মতই, বুঝবার চেষ্টাও করেনি। পরিবারের একজন সদস্য প্রতিনিয়ত আমাকে mentally abuse করে গেছেন, এখনো যাচ্ছেন। এই গোটা সময়টায়, এত অস্থিরতার মাঝেও আমি academically excellent result করে গেছি। নিয়মিত লিখেছি। Competitive exam এ গোটা দেশ থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে খুব ভালোভাবে উতরেও গেছি। কিন্তু আমার হৃদয়ের একটা অংশ যে কত শত ক্ষতে ভেঙে গেছে, সেটা কিন্তু গোটা জীবনেও আমি ঠিক করতে পারবো না। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ে দাড়িয়ে থেকেও, ওই ১৬/১৭ বছরের কিশোরী মেয়েটাকে বড্ড ভালোবাসি। নিজেকে প্রবোধ দেই, ও পেরেছিলো, তুমিও পারবে। কিন্তু আজ দীর্ঘ ৮ বছর পর মনে হচ্ছে, ওই মেয়েটাকে আমি তার প্রাপ্যটা দিতে পারিনি।। ওই মেয়েটা পালাতে চেয়েছিল, জীবনে উড়তে চেয়েছিল, মেয়েটা লিখেছিল “আমাকে একটু স্থিরতা দিতে পারো?”। আমি মেয়েটাকে তার প্রাপ্য স্থিরতাটুকু দিতে পারিনি। আজ ২০২১ এর তরুণী, ২০১৩-র কিশোরী-টির কাছে হেরে গেছে।)